একজন ব্যাটসম্যানকে করা একটি অবৈধ নিক্ষিপ্ত বল যা আম্পায়ার মনে করে যে একজন ব্যাটসম্যানের পক্ষে স্বাভাবিক ভাবে খেলার পক্ষে খুব দূরে বা (আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে) বেশি উচ্চতর।
এই জাতীয় অবৈধ নিক্ষিপ্ত বলের জন্য ব্যাটিং দলকে অতিরিক্ত রান দেওয়া হয়।
সংজ্ঞা
ক্রিকেটের আইনে ২২ নম্বর আইন দ্বারা ওয়াইড বলের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।[১]
একটি নিক্ষিপ্ত বল ওয়াইড হবে যদি নিক্ষিপ্ত বলটি ব্যাটসম্যানের খেলার নাগালের বাইরে ও বেশ দূর দিয়ে অতিক্রম করার ফলে তিনি ব্যাট দ্বারা বল স্পর্শ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন অর্থাৎ একজন ব্যাটসম্যান যেখানে দাড়ান সেখান থেকে স্বাভাবিকভাবে খেলার পক্ষে যথেষ্ট দূরে থাকে।
তবে নিক্ষিপ্ত বল ওয়াইড হবে না যদি বল ব্যাট বা ব্যাটসম্যানকে আঘাত করে অথবা ব্যাটসম্যান যদি সরে গিয়ে বলকে নাগালের বাইরে রাখে।
তাছাড়া কোন বল যদি ওয়াইডের পাশাপাশি নো-বলের যোগ্য হয় তবে আম্পায়ার এটিকে নো-বল ডাকবে, ওয়াইড নয়।[২] কারণ নো বল বোলিং দলের পক্ষে বেশি গুরুতর অপরাধ।
একটি ওয়াইড বল করা হলে দলের মোট রানের সাথে আরও একটি রান যোগ করা হয়, তবে কোন ব্যাটসম্যানের মোট রানের সাথে তা যোগ হয় না।
উইকেট রক্ষক যদি তালগোল পাকায় বা বল ধরতে ব্যর্থ হয় তবে ব্যাটসম্যানরা অতিরিক্ত রান নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। এইভাবে নেওয়া রান বাই রানের পরিবর্তে ওয়াইড হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হয়। উইকেট রক্ষক যদি বলটি ধরতে ব্যর্থ হয় এবং এটি বাউন্ডারি সীমানা অতিক্রম করে তবে ব্যাটিং দলকে পাঁচ রান দেওয়া হয়, ঠিক যেমন কোন নো-বলে আঘাত করে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে চার রান হলে দেওয়া হয়। আইন ১৯.৭ অনুসারে যদি একটি ওয়াইড বল মাটি স্পর্শ না করে বাউন্ডারি অতিক্রম করে তবে কেবল পাঁচটি ওয়াইড রান (সাত রান নয়) হয় - বল যদি ব্যাটে ছুঁয়ে যায় তবেই একটি বাউন্ডারি ছয় রান করা যায়।
অতিরিক্ত নিক্ষিপ্ত বল
একটি ওভারে ছয়টি নিক্ষিপ্ত বলের একটি হিসাবে বা ব্যাটসম্যানের মোকাবেলা করা বল হিসাবে ওয়াইড গণনা করা হয় না এবং তাই একটি অতিরিক্ত বল নিক্ষেপ করতে হয়।
বোলারের পরিসংখ্যান
ওয়াইড বল বোলারের দোষ হিসাবে বিবেচিত হয় এবং বোলারের বোলিং বিশ্লেষণে বোলারের খাতে সকল ওয়াইড রান যোগ করা হয়। তবে এটি ১৯৮০ এর দশকের প্রথম থেকে যোগ করা হচ্ছে - বোলারের বোলিং বিশ্লেষণের সাথে ওয়াইড (এবং কোন নো-বল) যোগ করা প্রথম টেস্ট ম্যাচ ছিল ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বরে ভারত বনাম পাকিস্তান এর ম্যাচ।
পুনরাবৃত্তির হার
ওয়াইড বল অপেক্ষাকৃত কম করা হয় তবে অনেক প্রতিযোগিতায় রক্ষণাত্মক বোলিং প্রতিরোধের জন্য আরো কঠোর ভাবে সীমানির্দেশ করার জন্য প্রবিধান যুক্ত করা হয়েছে এবং ওয়াইড বলের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ওয়ানডে ক্রিকেটে বল যদি স্টাম্পকে আঘাত না করে এবং ব্যাটসম্যানের লেগ সাইডে পড়ে তবে নিক্ষিপ্ত বলকে এখন ওয়াইড ডাকা হয়। ১৯৭৫ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল এবং ফাইনালে মোট ৭৯ টি অতিরিক্ত রান হয়েছিল যার মধ্যে ৯ টি ওয়াইড ছিল (১১.৪%); ২০১১ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল এবং ফাইনালে ৭৭ টি অতিরিক্ত রান হয় যার মধ্যে ৪৬ টি ওয়াইড ছিল (৫৯.৭%)। ১৯৭০-৭১ সালের অ্যাশেজ সিরিজের ছয়টি টেস্টে ৯ টি ওয়াইড হয়েছিল; ২০১০-১১ সালের অ্যাশেজ সিরিজের পাঁচটি টেস্টে ৫২ টি ওয়াইড হয়।[৩]
একজন আম্পায়ার উভয় বাহু সোজা করে অনুভূমিক সরলরেখা তৈরি করে ওয়াইডের সংকেত দেন।
স্কোরিং সংকেত
ওয়াইডের প্রচলিত স্কোরিং সংকেত হলো একটি সমান ক্রস (আম্পায়ার দাড়িয়ে বাহু প্রসারিত করে ওয়াইডের ইঙ্গিত দেওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে)।
ব্যাটসম্যান যদি ওয়াইড বল থেকে বাই রান নেয় বা বল ৪ রানের জন্য বাউন্ডারিতে চলে যায় তাহলে প্রতিটি বাই রান এর জন্য প্রতিটি কোণে একটি বিন্দু যুক্ত হয় যা সাধারণত উপরের বাম থেকে শুরু হয়ে তারপর উপরে ডানদিকে এরপর নিচে বাম এবং সবশেষে ৪ কোণের সবগুলোতে বিন্দু যুক্ত হয়।
ব্যাটসম্যান যদি ব্যাট দিয়ে স্ট্যাম্পে আঘাত করে বা উইকেট রক্ষক যদি ব্যাটসম্যানকে স্ট্যাম্পড করে দেয় তবে ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যাবে এবং ওয়াইডের ‘ক্রস’ চিহ্নে একটি ‘W’ যুক্ত হয়।
ওয়াইড বলে বাই রান নেওয়ার সময় যদি একজন ব্যাটসম্যান রান আউট হয় তবে সম্পূর্ণকরা রানগুলির সংখ্যা বিন্দু হিসাবে দেখানো হয় এবং অসম্পূর্ণ রানের জন্য কোণে একটি 'আর' যুক্ত করা হয়।
বাটসম্যানের দিক পরিবর্তনের ব্যাখ্যা
ব্যাটসম্যান যদি সুইচ হিট খেলে তবে আদর্শ দূরত্বের মধ্যে তাদের উভয় দিকে বল করা যেতে পারে এবং বলটিকে ওয়াইড ডাকা হবে না।[৪]